ব্লকচেইন এমন একটি ডিজিটাল খাতা (Digital Ledger), যেখানে লেনদেন বা তথ্যগুলো সিকোয়েন্স অনুযায়ী ব্লকে (Block) সংরক্ষিত হয় এবং একটির সাথে আরেকটি ব্লক চেইনের মতো যুক্ত থাকে।
এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে তথ্য পরিবর্তন বা মুছা প্রায় অসম্ভব এবং প্রতিটি লেনদেন স্বচ্ছ ও সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত থাকে।
🟢 কীভাবে ব্লকচেইন কাজ করে? ধাপে ধাপে সহজভাবে:
১. লেনদেনের সূচনা (Transaction Initiation)
যখন কেউ কোনো লেনদেন শুরু করে, যেমন:
- টাকা পাঠানো (যেমন, বিটকয়েন লেনদেন)
- চুক্তি করা (Smart Contract)
- কোনো ডেটা আপডেট করা
তখন সেই লেনদেনটি নেটওয়ার্কে সম্প্রচার (Broadcast) করা হয়।
২. লেনদেন যাচাই (Transaction Verification)
ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে অনেক কম্পিউটার (Node) থাকে, যারা এই লেনদেনটি যাচাই করে।
- এই নোডগুলো চেক করে যে লেনদেনটি সঠিক কিনা (যেমন, প্রেরকের কাছে যথেষ্ট টাকা আছে কিনা)।
- এটি প্রায় ব্যাংকের মতো, তবে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াই।
৩. ব্লক তৈরি (Block Creation)
যাচাই হওয়া লেনদেনগুলো একত্রিত হয়ে একটি "ব্লক" তৈরি করে।
- প্রতিটি ব্লকের মধ্যে সেই লেনদেনের তথ্য, সময় (Timestamp), এবং পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ (Hash) থাকে।
- হ্যাশ: এটি একটি ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট, যা প্রতিটি ব্লককে আলাদা করে।
৪. ব্লক চেইনে যুক্ত করা (Block Addition to Chain)
যখন একটি ব্লক তৈরি হয়, সেটি ব্লকচেইনে আগের ব্লকের সাথে যুক্ত হয়।
- প্রতিটি ব্লক তার পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ বহন করে, যা একটি চেইন তৈরি করে।
- যদি কেউ একটি ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করতে চায়, তবে সেই ব্লকের হ্যাশ পরিবর্তিত হবে এবং এর ফলে পরবর্তী সব ব্লক অকার্যকর হয়ে যাবে।
৫. স্থায়ী সংরক্ষণ (Immutable Record)
একবার ব্লকটি চেইনে যুক্ত হলে, সেটি স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে যায়।
- কেউ সেই ব্লকের তথ্য পরিবর্তন বা মুছতে পারবে না।
- প্রতিটি অংশগ্রহণকারী একই কপি পায়, যা নেটওয়ার্ক জুড়ে বিতরণ (Distributed) থাকে।
🔒 ব্লকচেইন কেন নিরাপদ?
- ডিস্ট্রিবিউটেড (Distributed): তথ্য এক জায়গায় নয়, বরং হাজারো কম্পিউটারের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে।
- ক্রিপ্টোগ্রাফি (Cryptography): প্রতিটি ব্লক হ্যাশ এবং ডিজিটাল সিগনেচার দ্বারা সুরক্ষিত।
- ইমিউটেবল (Immutable): ব্লক চেইনে যুক্ত হওয়ার পর তথ্য পরিবর্তন করা যায় না।
💡 সহজ উদাহরণ:
ধরুন, আপনি একটি অনলাইন খাতা (ডিজিটাল খাতা) তৈরি করেছেন, যেখানে বন্ধুদের সাথে খরচ ভাগ করছেন।
- যখন কেউ টাকা পাঠায়, তখন একটি নতুন লাইন (ব্লক) খাতায় যোগ হয়।
- সেই খাতাটি সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয় (ডিস্ট্রিবিউটেড)।
- যদি কেউ খাতার একটি লাইন বদলাতে চায়, তবে সবার খাতায় মিল থাকতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।
🌍 ব্লকচেইনের ব্যবহার:
- Cryptocurrency: যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম
- Supply Chain: পণ্যের উৎস ও সরবরাহ ট্র্যাক করা
- Smart Contracts: স্বয়ংক্রিয় চুক্তি সম্পাদন
- Healthcare: রোগীর তথ্য সুরক্ষিত রাখা
- Voting: ডিজিটাল ভোটিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
🚀 শেষ কথা:
ব্লকচেইন একটি বিশ্বস্ত ডিজিটাল খাতা, যেখানে প্রতিটি লেনদেন স্বচ্ছ, নিরাপদ, এবং পরিবর্তন-অযোগ্য। এটি শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য নয়, বরং বিভিন্ন শিল্প খাতে ডেটা সুরক্ষা, স্বয়ংক্রিয়তা, এবং স্বচ্ছতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
0 Comments